সুত্র -দৈনিক আজাদী|
ক্যান্সারের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর আর বাঁচলেন না অভিনেতা আবদুল কাদের। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে তার। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে সমান সক্রিয় আবদুল কাদেরকে বিপুল জনপ্রিয়তা দিয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের টিভি সিরিজ ‘কোথাও কেউ নেই‘র বদি চরিত্রটি। অভিনেতা আবদুল কাদেরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে শারীরিক নানা জটিলতায় চিকিৎসায় শুরু হয় আবদুল কাদেরের। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইতে নেওয়া হয়। সেখানকার হাসপাতালে পরীক্ষার পর ১৫ ডিসেম্বর তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। খবর বিডিনিউজের। চেন্নাইয়ের চিকিৎসকরা জানান, কাদেরের ক্যান্সার চলে গেছে ফোর্থ স্টেজে, অর্থাৎ চিকিৎসার বাইরে, কেমোথেরাপি নেওয়ার মতো অবস্থাতেও নেই। পরে তার পরিবার গত ২০ ডিসেম্বর তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাংলাদেশে, ভর্তি করানো হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয় তার। কাদেরের পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম জেমি বলেন, সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে মিরপুর ডিওএইচএসের বাসায় নেওয়া হয় মরদেহ। সেখানে জানাজা শেষে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দুপুর ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমিতে রাখা হয়। এরপর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে সমাহিত করা হয় তাকে।
১৯৫১ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে জন্ম নেওয়া কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন কাদের। তার অভিনীত মঞ্চনাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই, স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’। এছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, দিল্লি, দুবাইয়ের মঞ্চেও তিনি বাংলা নাটকে অভিনয় করেছেন।
বিটিভিতে শিশু-কিশোরদের জন্য নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’র মাধ্যমে টিভি নাটকে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি। মঞ্চে ৩০টি ও টিভি নাটকে তিনি তিন হাজারের মতো নাটকে অভিনয় করেছেন। বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও নিয়মিত মুখ তিনি।
আবদুল কাদের অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’, ‘আমার দেশের লাগি’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘দীঘল গায়ের কন্যা’, ‘ভালমন্দ মানুষেরা’, ‘দূরের আকাশ’, ‘ফুটানী বাবুরা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘ফাঁপড়’, ‘চারবিবি’, ‘সুন্দরপুর কতদূর’, ‘ভালোবাসার ডাক্তার’, ‘চোরাগলি’, ‘বয়রা পরিবার’ ইত্যাদি।
২০০৪ সালে আবদুল কাদের অভিনয় করেন ‘রং নাম্বার’ চলচ্চিত্রে। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের কাজও করেছেন এ সফল অভিনেতা। দীর্ঘ অভিনয় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে টেনাশিনাস পদক, মহানগরী সাংস্কৃতিক ফোরাম পদক, অগ্রগামী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক, যাদুকর পিসি সরকার পদক, টেলিভিশন দর্শক ফোরাম অ্যাওয়ার্ড, মহানগরী অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পদকও পেয়েছেন আবদুল কাদের।