চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কুতুবদিয়া ও সীতাকুন্ড এলাকার ১৭ জলবায়ু স্থানচ্যুত পরিবার পেল নতুন বাড়ি। বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামের বাসিন্দা নুর ইসলাম। ছনুয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকা সংলগ্ন এলাকায় ছিল তার বাড়ি। ২০ বছর আগেও ছিল তার নিজস্ব বাড়ি, কৃষি জমি। ৪ ছেলে মেয়ে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। কৃষিকাজ করে তার সংসার চলত। কিন্ত ঘূর্ণিঝড় এবং তার পরবর্তীতে জলোচ্ছাসে দূর্বল হয়ে যাওয়া বেড়িবাধঁ তার জীবনে নেমে আসে দূবির্ষহ অবস্থা। পরে তাদের ইপসার উদ্যোগে নতুন করে বাড়ি করে দিলে সে নতুন বাড়ি পেয়ে আবারো বেঁচে থাকার প্রেরনা ফেলেন। অপরদিকে নুর ইসলাম জানান, “২০২১ সালের জুন মাসের কোন একদিন গ্রামে ইপসার সাথে কমিউনিটির মানুষদের একটি নাগরিক সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষদের দুরাবস্থা এবং তাদের সমস্যা সমাধানে পুনবার্সনের কথা বলা হয়েছিল। ইপসার সদস্যরা বিভিন্ন পরিবারদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি তাদের সাথেও কথা বলেছিলো, কিন্ত তাকে যে চুড়ান্ত করা হবে সেটা ছিল কল্পনার অতীত। আমি ঘরের নির্মাণকাজ হতে দেখেছি, সেমিপাকা ঘর এর কাজ শেষ হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশিদ আমার কাছে এসে বলেন ইপসার নির্মিত একটি ঘরের বাসিন্দা আমি, আমি ও আমার পরিবার থাকা আরম্ভ হয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য ইপসা থেকে সেলাই ট্রেনিং পাইছে আমারা স্ত্রী, এখন দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিন। আমার যাযাবর জীবনের অবসান হয়েছে, আমি চিরকৃতজ্ঞ।” সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নে ২টি জলবায়ু স্থানচ্যুত পরিবারকে পুনবার্সনের পাশাপাশি সেখানে ২টি গভীর নলকূপ প্রদান, ৪টি পরিবারকে ঘর সংস্কারের জন্য টিন ও পিলার প্রদান, সেনিটারি ল্যাট্রিন বিতরণ করা হয়েছে ১০টি পরিবারকে এবং সেলাই ট্রেনিং ও মেশিন প্রদান করা হয়েছে ১০জন মহিলাকে। একই ভাবে খানখানাবাদ ইউনিয়নে মনোয়ারা বেগম এবং নুর মোহাম্মদ। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলংয়করী ঘূর্ণিঝড়ে ভিটা বাড়ি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এর পর থেকে পরিবারের অপর সদস্যদের নিয়ে কখনও বেড়িবাঁধে পাশে আবার কখন অন্যের দেওয়া বাড়িতে কোন রকমে দিন কাটিয়ে দিত। আর সে দুঃখের অবসান করেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইপসার উদ্যোগে ৪ শতক জায়গা ক্রয় করে তার উপর ২ রুম বিশিষ্ট একটি বাড়ি নির্মাণ করে এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি নলকূপ এবং বিদ্যুতের সুব্যবস্থা করার মাধ্যমে তাদের দুঃখের দিনে অবসান হতে চলেছে।
বাঁশখালীর মনোয়ারা বেগম ও নুর ইসলাম; কুতুবদিয়া উপজেলার মীর হোসেন ও রহিমা বেগম; সীতাকুন্ড উপজেলার সেলিম উদ্দীন,পায়রা বেগম সহ ১৭ টি জলবায়ু স্থানচ্যুত পরিবারকে মুজিব শতবর্ষ উদযাপন স্মরণীয় করতে গত ২ বছরে উন্নয়ন সংস্থা ইপসা (ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন) কমিউনিটি ভিত্তিক পুনবার্সনের আওতায় নতুন আবাসন উপহার দিয়েছে ।
“বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও অধিকার নিশ্চিতকরণ” প্রকল্পের আওতায় বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় ১০টি গভীর নলকূপ স্থাপন, ৪০টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ৫০ জন মহিলাকে সেলাই প্রশিক্ষন ও সেলাই মেশিন বিতরণ, ২ জনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, ১৮ জনকে মাচায় ছাগল পালন প্রশিক্ষন ও ছাগল বিতরণ, ৪০টি পরিবারের মাঝে ঘর সংস্কারে টিন ও পিলার স্থাপন সহযোগিতা প্রদান, ৮টি পরিবারের মাঝে সেমিপাকা ২ কক্ষবিশিষ্ট ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ২০টি কমিউনিটি টিম গঠন করে তাদের সদস্যদের নেতৃত্ব দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
ইপসার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. প্রবাল বড়ুয়া জানান, ইপসার লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু স্থানচ্যুত ভুমিহীনদের জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক পুনবার্সন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসংস্থাানমূলক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা যাতে মূল সমাজের সাথে মিলেমিশে থাকতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য বাসস্থান, ভূমি এবং সম্পদের বিষয়ে অধিকার ভিত্তিক সমাধান চিহ্নিতকরন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্থানচ্যুত মানুষের অধিকার রক্ষায় সকল পেশার মানুষকে একত্রিত করে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে খাস জমি প্রদানে অগ্রাধিকার, স্থানচ্যুত মানুষের বর্তমান অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন কতৃক নাগরিকত্বসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চয়তকরন, স্থানচ্যুত মানুষের তালিকা প্রস্তত ও তাদের স্বল্প মূল্যে কৃষি উপকরনসহ বীজ, সার এবং চারা সরবরাহ করার মাধ্যমে টেকসই জীবিকার সংস্থান করা উচিত।
ইপসার প্রধান নির্বাহী মো.আরিফুর রহমান বলেন, ইপসা ২০১১ সাল থেকে দেশের উপকূলীয় ও নদী বিধৌত এলাকাসমূহে জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষদের কল্যাণে অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজন ভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে। সেই কর্মসূচির আলোকে দাতা সংস্থার সহায়তায় মুজিব শতবর্ষের উদযাপনকে স্মরণীয় রাখতে ইপসা চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সীতাকুন্ড উপজেলায় এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১৭টি জলবায়ু স্থানচ্যুত পরিবারকে পুনবার্সন করেছে। ভবিষ্যতে বৃহৎ আকারে পুনবার্সন কর্মসূচি পরিচালনা করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।