নিজস্ব প্রতিবেদক:
১২ই নভেম্বর, ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দশ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। ঐ ঘূর্ণিঝড় ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এই ঝড়ের ব্যাপারে আগাম কোনো সতর্কতাই নেয়নি তৎকালীন সরকার। দুর্যোগ মোকাবিলা ও ত্রাণ সরবরাহের বিষয়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অনীহা কারণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্টি হয় ব্যাপক গণ অসন্তোষ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সময়ে চলমান নির্বাচনী কর্মকান্ড ছেড়ে ছুটে যান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে। শুরু করেন ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম। বাংলাদেশের মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কর্মসূচি প্রণয়নের পথিকৃৎ। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় মুজিব কিল্লা নির্মাণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ অনুমোদন দান করেন, যা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তাঁর আদর্শের অনুসরণে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের এহেন কর্মকা-ে ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগে মৃত্যুর হার ১০ লক্ষ থেকে এককের ঘরে নেমেছে। বর্তমানে উপকূলীয় ১৩ জেলার ৪১ টি উপজেলায় ৩৫৫টি ইউনিয়নে ৩৭০১টি ইউনিটে মোট ৭৪,০২০ জন (৩৭০১০ জন পুরুষ এবং ৩৭০১০ জন নারী স্বেচ্ছাসেবক) সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় এর অধীন বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকু-, মীরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলায় ৫৮টি ইউনিয়নে ৪৪৪টি ইউনিটে ৮৮৮০ (পুরুষ ৪৪৪০ মহিলা ৪৪৪০) জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত আছে । চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে উপপরিচালক এবং উপজেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক ও উপজেলা টিম লিডারের নেতৃত্বে ৮৮৮০ (পুরুষ ৪৪৪০ মহিলা ৪৪৪০) জন স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে সিপিপির স্বেচ্ছাসবা প্রদান করে আসছেন। স্বেচ্ছাবকদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সিপিপিতে এ পর্যন্ত ২৭ জন স্বেচ্ছাসেবক আত্মহুতি দিয়েছেন। তন্মধ্যে ১৯৯১ সনের ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন সন্দ্বীপ উপজেলায় ০৪ জন এবং ১৯৯৭ সনের ঘূর্ণিঝড়ে সীতাকু- উপজেলায় ০১ জন সর্বমোট ০৫ জন আত্মহুতি দিয়েছেন।
নিবেদিত প্রাণ এই স্বেচ্ছাসেবকগণের মধ্যে এক উপজেলার সাথে অন্য উপজেলার স্বেচ্ছাসেবকগণের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও স্বেচ্ছাসেবী মানষিকতা বৃদ্ধি করার প্রয়াসে চট্টগ্রামের কাট্রলী সী বিচে শনিবার আয়োজন করা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের মিলন মেলা। যেখানে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় এর অধীন বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকু-, মীরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিধি স্বতঃস্ফুর্ত ও নিজ খরচে যোগদান করেছেন। এই দিনব্যাপী সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক মিলন মেলা টি সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সমাবেশে পরিনত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক কার্যালয় চট্টগ্রাম এর উপ-পরিচালক মো: রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য, ২৮১-চট্টগ্রাম-৪ আলহাজ্ব দিদারুল আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শওকত আলী, ভাটিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাজীম উদ্দিন, কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব মোরশেদ হোসেন চৌধুরী, সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ, এবং বিশিষ্ঠ সাংবাদিক, বিভাগীয় প্রধান মোহনা টিভি জামাল হোসেন মঞ্জু, উপস্থিত ছিলেন। সকাল বেলা অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এনবি গ্রুপ এর পরিচালক নাজিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত আছেন বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সদস্য, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। অনুষ্ঠানে ১৯৭২ সালে সিপিপি প্রতিষ্ঠিত হয়। সিপিপি প্রতিষ্ঠা ও ক্রমবিকাশ,ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যক্ষদর্শী স্বেচ্ছাসেবকগণ অভিব্যক্তি বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানে সিপিপি সাংস্কৃতিক টিম কর্তৃক গোর্কীর স্মরণ ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস বিষয়ক এমনকি বিনোদন মূলক গান ও রেফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এর মাননীয় সচিব মোহাম্মদ মোহসীন, অতিরিক্ত সচিব (সিপিপি) আলী রেজা মজিদ, সিপিপি’র পরিচালক (প্রশাসন) আহমাদুল হক সহ সিপিপি’র সকল পরিচালক, উপ পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপজেলা টিম লিডারগেনের নির্দেশনা, উৎসাহ ও সহযোগীতায় এই চট্টগ্রাম সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের মিলন মেলার আয়োজন।